বাংলাদেশের শিল্প

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - NCTB BOOK

নাফিসের বড় চাচা ছাতক সিমেন্ট কারখানার একজন ইঞ্জিনিয়ার। স্কুলের ছুটিতে নাফিস তার পিতা- মাতা ও ভাইবোনের সাথে চাচার কাছে বেড়াতে গেল। চাচা তাকে এবং তার চাচাত ভাই-বোনদেরকে সিমেন্ট কীভাবে তৈরি হয় দেখাতে নিয়ে গেলেন। নাফিস দেখল সেখানে হাজার হাজার পাথরের সমাবেশ। তার চাচা জানাল প্রতিদিন ভারত সীমান্ত থেকে অগণিত পাথর এখানে আসছে। এ সকল পাথরই হচ্ছে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ পাথরকে সিমেন্টে রূপান্তরিত করা হয়। ছাতক সিমেন্ট খুব মানসম্পন্ন।

নাফিসের দেখা ছাতক সিমেন্ট কারখানা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ অধ্যায়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকারের শিল্প, এর গুরুত্ব এবং এগুলোর সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব ।

এ অধ্যায়টি শেষে আমরা-

  • কুটির শিল্পের ধারণা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • বাংলাদেশের কুটির শিল্পের উপযুক্ত ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে পারব।
  • বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কুটির শিল্পের উন্নয়নের পথে বাধাগুলো শনাক্ত করতে পারব।
  •  কুটির শিল্প বিকাশের জন্য করণীয় চিহ্নিত করতে পারব।
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ধারণা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব। 
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • দেশের এবং নিজেদের এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপযুক্ত ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে পারব।
  • বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে পারব ।
  • বৃহৎ শিল্পের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারব।
  • বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বৃহৎ শিল্পের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্প স্থাপনে অনুপ্রাণিত হব।
Content added || updated By
মাঝারি সেবামূলক শিল্প
মাঝারি উৎপাদন শিল্প
বৃহৎ সেবাশিল্প
বৃহৎ উৎপাদন শিল্প
চট্টগ্রাম
কক্সবাজার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বান্দরবান

শিল্পের প্রকারভেদ

সাধারণত ব্যাপক মূলধন সামগ্রী ব্যবহার করে কারখানাতে কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে মাধ্যমিক বা চূড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলা হয়। শিল্পের উৎপাদন সাধারণত কারখানাভিত্তিক হয় এবং নির্দিষ্ট দ্রব্যের কারখানাসমূহকে একত্রে শিল্প বলা হয়। যেমন- পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান হলেও দেশের অর্থনীতিতে শিল্পের ভূমিকা কম নয়। অর্থনীতিতে শিল্পের ভূমিকা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করে সেগুলোকে লাভজনকভাবে পরিচালনা করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধিই প্রধান উদ্দেশ্য। জাতীয় শিল্পনীতি-২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশের শিল্পকে ব্যাপক অর্থে উৎপাদন শিল্প ও সেবামূলক শিল্প এ দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।

Content added By

উৎপাদনমুখী শিল্প

পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংযোজন এবং পরবর্তীতে উৎপাদিত পণ্যের পুণঃসামঞ্জস্যকরণ ও প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক সকল প্রকার শিল্প উৎপাদনমুখী শিল্পের অন্তর্গত। উৎপাদন শিল্পে শ্রম ও যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে পরিণত পণ্যে রূপান্তর করা হয়। বস্ত্র শিল্প, চিনি শিল্প, পাট ও পাটজাত শিল্প, সার শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, চামড়া শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং রেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প উৎপাদনমুখী শিল্পের উদাহরণ।

 

Content added || updated By

যন্ত্রপাতি কিংবা স্থায়ী সম্পদ বা মেধা সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে যে সকল সেবামূলক কর্ম সম্পাদিত হয় সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান সেবামূলক শিল্পের অন্তর্ভুক্ত । মৎস্য আহরণ, নির্মাণ শিল্প ও হাউজিং, অটো মোবাইল সার্ভিসিং, বিনোদন শিল্প, হর্টিকালচার, ফ্লোরিকালচার, ফুলচাষ ও ফুল বাজারজাতকরণ, দুগ্ধ ও পোল্ট্রি উৎপাদন এবং বিপণন, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, পর্যটন ও সেবা, পরিবহন ও যোগাযোগ ইত্যাদি সেবা শিল্পের উদাহরণ।

বিনিয়োগের মাপকাঠিতে উৎপাদনমুখী শিল্প ও সেবা শিল্পকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্প, বৃহৎ শিল্প। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Content added || updated By

কুটির শিল্প বলতে পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য বিশিষ্ট সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকার নিচে এবং পারিবারিক সদস্য সমন্বয়ে সর্বোচ্চ জনবল ১০-এর অধিক নয়। সাধারণত স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাই- বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সহায়তায় কুটির শিল্প পরিচালিত হয়। তারা পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন সময়ে উৎপাদন বা সেবা কাজে জড়িত থাকে।

বাংলাদেশের কুটির শিল্পের উপযুক্ত ক্ষেত্র

ছোট জায়গা, স্বল্প মূলধন, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ও সৃজনশীলতা, কারিগরি জ্ঞান এবং পারিবারিক সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে কুটির শিল্প। নানা রকমের কুটির শিল্প আমাদের দেশকে করেছে সমৃদ্ধ। বিভিন্ন অঞ্চলের কুটির শিল্প এত বেশি সুনাম অর্জন করেছে, যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সে অঞ্চলের কুটির শিল্পের নামে পরিচিতি লাভ করেছে। যেমন- রাঙ্গামাটি কুটির শিল্প, মনিপুরি কুটির শিল্প, কুমিল্লার খদ্দর ইত্যাদি। নিম্নে বাংলাদেশের কুটির শিল্পের উপযুক্ত ক্ষেত্রের একটি তালিকা দেয়া হলো—

কুটির শিল্পের ধরন উৎপাদিত দ্রব্যাদি
পাটজাত শিল্প স্কুল ব্যাগ, শিকা, দেয়াল মাদুর, পাটের স্যান্ডেল, কার্পেট
বাঁশ ও বেত শিল্প বেতের ঝুড়ি, বাল্ব শেড, চায়ের ট্রে, বেতের চেয়ার, দোলনা, পুতুল, ঝুড়ি, ফুলদানি, চাটাই, ডালা, কুলা, চালুন
মৃৎ শিল্প বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু, ফল, ফুল, তৈজসপত্র, শোপিস, পুতুল, ফুলদানি, ফুলের টপ, হাঁড়ি, কলসি ও অন্যান্য সামগ্রী
তাঁত ও বস্ত্র শিল্প শাড়ি, লুঙ্গি, টেবিল ক্লথ, সোফার ক্লথ, জামদানি, সোয়েটার, ব্যাগ, মাফলার, সুতার টুপি, ওয়ালম্যাট, চাদর, গামছা, শীত বস্ত্র, রেডিমেড গার্মেন্ট, হোসিয়ারি।
খাদ্য ও সহায়ক শিল্প চা নাচুর, জ্যামজেলি, মধু, গুড়, রসগোল্লা, মিষ্টি, দধি, চিপস, সেমাই, কনফেকশনারি
হস্ত শিল্প হাতের শিল্প কার্পেট, সতরঞ্চি, নকশিকাঁথা, অফিস স্টেশনারি, ও বুক , বাইন্ডিং, মাছ ধরার জাল, মাদুর, মিষ্টির প্যাকেট
ঝিনুক শিল্প ঝিনুকের মালা, অলংকার, খেলনা, শোপিস,
ক্ষুদ্র ইস্পাত ও প্রকৌশল শিল্প দা, কোদাল, খুন্তি, কাঁচি, সুরমাদানি, রেডিও-টেলিভিশন ও ফ্রিজ মেরামত, ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ, বালতি-ট্রাক তৈরি, মটর সাইকেল, জিপ, ট্রাক ও বাস মেরামত।
কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প ব্যবহারিক তৈল, আতর, গোলাপজল, আগরবাতি, মোমবাতি, ওয়াশিং সোপ, ফিনাইল

 

Content added || updated By

উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে 'ক্ষুদ্র শিল্প' বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৫-৯৯ জন শ্রমিক কাজ করে।

শিল্পের ক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র শিল্প' বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করে।

Content added || updated By

উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে ‘মাঝারি শিল্প' বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১০ কোটি টাকার অধিক এবং ৩০ কোটি টাকার মধ্যে কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০-২৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।
সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে ‘মাঝারি শিল্প' বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১ কোটি টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৫০-১০০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপযুক্ত ক্ষেত্র

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ধরন উৎপাদিত শিল্প
খাদ্য ও খাদ্যজাত শিল্প ময়দা, আটা, সুজি, সেমাই, ব্রেড ও বিস্কুট, লাল চিনি, মধু শোধন, শুকনা ও টিনজাত মাছ, তেলের মিল, চকোলেট, সিগারেট ও বিড়ি কারখানা,চাল, মুড়ি, চিড়া, খৈ ইত্যাদি প্রস্তুতকরণ (স্বয়ংক্রিয় চাল কলসহ)
বস্ত্ৰ শিল্প থান কাপড়, বেডশিট, শার্ট-প্যান্টের কাপড়, শাড়ি, গামছা।
পাট ও পাটজাত শিল্প সুতা, সুতলি, পাটের ব্যাগ, কাপড়, কার্পেট, পাটের স্যান্ডেল ও সকল পাটজাত দ্রব্য
বন শিল্প কাঠ, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র, করাত কল, কাঠের খেলনা ও উন্নতমানের আসবাবপত্র, ক্রীড়া সামগ্ৰী
মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প বিভিন্ন ধরনের কাগজ, প্যাকেট, কার্টন তৈরি
চামড়া ও রাবার শিল্প চামড়া ও রাবারের ব্যাগ, জুতা কারখানা
ক্ষুদ্র ইস্পাত ও প্রকৌশল শিল্প হাস্তচালিত টিউবওয়েল, কৃষি যন্ত্রপাতি, মিল কারখানার যন্ত্রপাতি, অটো মোবাইল সামগ্রী ।
কেমিক্যাল,ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প বিভিন্ন ধরনের রং, পেইন্ট, প্লাস্টিক কারখানা, ঔষধ তৈরির কারখানা, জৈব সার, মিশ্র সার, গুটি ইউরিয়া তৈরি
গ্লাস ও সিরামিক শিল্প বিভিন্ন ধরনের গ্লাস ও সিরামিক সামগ্রী, চীনা মাটির জিনিসপত্র
হিমাগার শিল্প বিভিন্ন ধরনের হিমাগার

 

 

 

Content added || updated By

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সমস্যা

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদান দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও এ জাতীয় শিল্প বিকাশে বেশ কিছু সমস্যা এখনও বিরাজমান । সমস্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রচলিত ধ্যান ধারনা, পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব, প্রয়োজনীয় আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বিদেশি পন্যের অবাধ বাজার দখল, অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ইত্যাদি ।
 

Content added By

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দারিদ্র্য বিমোচন স্বকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এর অবদান উল্লেখযোগ্য। দেশের ৯৬ ভাগ শিল্পই কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতাভুক্ত। কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র হচ্ছে এ সকল শিল্প। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এ শিল্পের সাথে জড়িত। স্বল্প মূলধন, স্থানীয় কাঁচামাল, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, সৃজনশীলতা, পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে মহিলাদের কর্মশক্তি ব্যবহার করে এ জাতীয় শিল্পগুলো গড়ে উঠে। ফলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দেশের গ্রামীণ মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরীকরণে কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য লালন ও বিকাশে এবং সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে দিতেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পরিসংখ্যান : জুন ২০১১


মোট ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা                                    ৯৩, ৬৬০

মোট কুটির শিল্পের সংখ্যা                                  ৬,৩৬,৫৭৭

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান             ৩৩.৩৭ লক্ষ

Content added || updated By

উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে ‘বৃহৎ শিল্প' বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৩০ কোটি টাকার অধিক কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৫০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।
সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে ‘বৃহৎ শিল্প' বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১৫ কোটি টাকার অধিক কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সার শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্প, গার্মেন্ট শিল্প, ইস্পাত শিল্প, প্রকৌশল শিল্প, ঔষধ তৈরি শিল্প, পাট ও পাটজাত শিল্প ও চা শিল্প ৷

বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে বৃহৎ শিল্পের গুরুত্ব :
বাংলদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতেতে শিল্পের ভূমিকা কম নয়। দেশের অর্থনীতিতে শিল্পের বিশেষ করে বৃহৎ শিল্পের অবদান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে বৃহৎ শিল্পের উন্নয়নে বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, আমাদের দেশের মত এত সহজলভ্য শ্রমিক বিশ্বের আর কোন দেশে নেই । তাই আমাদের দেশে সেই ধরনের বৃহৎ শিল্পের প্রয়োজন যেখানে অধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বৃহৎ শিল্প

  • খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প
  • জনশক্তি রপ্তানি
  • জাহাজ নির্মাণ ও পরিবেশসম্মত জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প
  • নবায়ন যোগ্য শক্তি (সোলার পাওয়ার, উইন্ড মিল) 
  • পর্যটন শিল্প
  • আইসিটি পণ্য ও আইসিটি ভিত্তিক সেবা


 

  • তৈরি পোশাক শিল্প
  • ভেষজ ঔষধ শিল্প
  • চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য
  • হাসপাতাল ও ক্লিনিক
  • অটোমোবাইল
  • বায়ুগ্যাস প্রকল্প

 

 

মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপিতে) শিল্পখাতের অবদান (১৯৯৫-৯৬) সালকে ভিত্তি বছর ধরে

ধরন আর্থিক বছর ২০০৮-০৯ আর্থিক বছর ২০০৯-১০ আর্থিক বছর ২০১০-১১ আর্থিক বছর ২০১১-১২ আর্থিক বছর ২০১২-১৩
মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প ৪১৭৩৫.০ ৪৪২২৯.৮ ৪৯০৬৯.৯ ৫৪২৩২.৩ ৫৯৮৩০.৬
জিডিপির শতকরা হার ১২.৭১% ১২.৬৮% ১৩.২০% ১৩.৭৫%- -
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ১৭০১৮.৯ ১৮৩৪০.৯ ১৯৪১১.৯ ২০৬৬৪.৭ ২২০৬১.৯
জিডিপির শতকরা হার ৫.১৮% ৫.২৬% ৫.২২% ৫.২৬% -

উৎস : Statistical year book of Bangladesh, BBS, August 2013

Content added || updated By

উন্নত ও অনুন্নত শিল্প এলাকা

অনুন্নত আর্থ- সামাজিক অবকাঠামো যেমন- অনুন্নত রাস্তা-ঘাট, অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, অনুন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষ শ্রমিকের অভাব, মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব ও শ্রমিক অসন্তোষ ইত্যাদি কারণে শিল্পোন্নয়নের গতিধারা ব্যাহত হচ্ছে। আবার দেশের সকল এলাকা শিল্পে সমানভাবে উন্নত নয়। ফলে শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন জেলাতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ২০১০ সালের শিল্পনীতিতে বাংলাদেশের শিল্পে অগ্রসর ও অনগ্রসর জেলাসমূহের একটি তালিকা প্রদান করেছে। উক্ত তালিকা নিম্নরূপ ঃ

বিভাগ উন্নত জেলা অনুন্নত জেলা
ঢাকা বিভাগ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর । জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, | 
চট্টগ্রাম বিভাগ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ওলহ্মীপুর খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান
রাজশাহী বিভাগ বগুড়া। জয়পুরহাট,নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা।
রংপুর বিভাগ   রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা ।
খুলনা বিভাগ   চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট।
বরিশাল বিভাগ   বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর,পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা।
সিলেট বিভাগ   সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ

 

Content added || updated By

কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে করনীয়

কুটির শিল্প প্রধানত পরিবারভিত্তিক। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝরি শিল্পে পরিবারের সদস্যগণ ছাড়াও বাইরের শ্রমশক্তির প্রয়োজন হয়। এ জাতীয় শিল্পের উদ্যোক্তাগণ নিজের শ্রম ও মেধা খাটিয়ে এবং স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তবে এ শিল্পের বিকাশে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সেগুলো হলো-
১. কাঁচামালের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ : সাধারণত যে জাতীয় কাঁচামাল যেখানে বেশি সেখানেই এ জাতীয় শিল্পগুলো বেশি গড়ে উঠে। তবে অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যোগাযোগ অব্যবস্থাসহ অন্যান্য কারণে কাঁচামাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন ।
২. বাজারের নৈকট্য : উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় ও বিপণনের জন্য প্রয়োজন বাজারের। আবার কাঁচামাল ক্রয়ের বাজারও কাছাকাছি থাকা উচিত। কাঁচামাল ক্রয় ও উৎপাদিত সামগ্রীর বাজার নিশ্চিত করা গেলে এ জাতীয় শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
৩. শ্রমিকের পর্যাপ্ত যোগান : ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প মূলত শ্রমঘন শিল্প। এদের বিকাশে দক্ষ জনশক্তি ও স্বল্প মজুরিতে শ্রমিকের প্রাপ্যতা গুরুত্বপূর্ণ। কুটির শিল্পের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ডিজাইন ও দক্ষ কারিগরি জ্ঞান অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকদের দক্ষ করার সুযোগ থাকতে হবে।
৪. পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা : প্রাথমিক অবস্থায় স্থানীয় কাঁচামাল ও বাজারের উপর নির্ভর করে শিল্প প্রতিষ্ঠা হলেও পণ্যের বাজার বিস্তৃত হলে তার বিক্রয় ও বিপণনের জন্য এবং কাঁচামাল যন্ত্রপাতি সুষ্ঠুভাবে আনা-নেয়ার জন্য যোগাযোগের সুব্যবস্থা আবশ্যক।

৫. স্থানীয় ও বৈদেশিক চাহিদার উপর গুরুত্বারোপ : যেহেতু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থানীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে, তাই স্থানীয় চাহিদা পূরণের গুরুত্ব দিয়ে শিল্প স্থাপিত হয়। তবে শুধুমাত্র স্থানীয় চাহিদার দিকে লক্ষ রাখলেই হয় না। বৈদেশিক বাজারের প্রসার ও একই সঙ্গে চাহিদা পূরণের দিকেও গুরুত্ব দিতে হয়।
৬. পুঁজির সহজলভ্যতা : ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য স্বল্প পুঁজির প্রয়োজন হলেও সকল সময় উদ্যোক্তার পক্ষে পুঁজির যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই ব্যাংকসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ ঋণ হিসেবে পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে ।
৭. সরকারি সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা : কুটির শিল্প দেশের ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক। তাই এ বিকাশ ও প্রকাশের জন্য সরকারি সকল ধরনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আশার কথা যে, সরকার ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। সরকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের বিকাশে সহায়তাদান, তাঁতশিল্প রক্ষা, বেনারসি ও জামদানি পল্লীর মতো রেশম পল্লী গড়ে তোলাসহ তাঁতি, কামার, কুমার, মৃৎশিল্প, বাঁশ, বেত, তামা, কাঁসা ও পাটি শিল্পে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

 

 

Content added By

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

Please, contribute to add content into বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content
Please, contribute to add content into সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content
Promotion